প্রকাশিত: ১০:৩৭ ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

আমেরিকার নতুন নাগরিকত্ব আইন: ভারতীয় মায়েদের আগাম সন্তান প্রসবের হিড়িক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশে জন্মগত নাগরিকত্ব বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভারতীয় মায়েদের মধ্যে সন্তান প্রসব নিয়ে ব্যাপক তাড়াহুড়ো শুরু হয়েছে। এই নীতি ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে, যা অনুযায়ী মার্কিন মাটিতে জন্মগ্রহণ করলেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবে না, যদি না অন্তত একজন অভিভাবক মার্কিন নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হন।
সিজারিয়ান অপারেশনের চাহিদা বেড়েছে
ইন্ডিয়া টুডে-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে বিশেষত নিউ জার্সি রাজ্যে, ভারতীয় মায়েরা সন্তান প্রসবে তাড়াতাড়ি সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন।
নিউ জার্সিতে একটি মাতৃত্বকালীন ক্লিনিক পরিচালনাকারী ডা. এস. ডি. রামা বলেন, “একজন নারী যিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং মার্চে সন্তান প্রসবের কথা ছিল, তিনি আগে সন্তান প্রসবের জন্য অনুরোধ করেছেন। তবে এ ধরনের সময়ের আগে জন্ম দেওয়া মায়েদের এবং শিশুর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।”
অকাল প্রসবের ঝুঁকি
প্রসূতি বিশেষজ্ঞ এবং গাইনোকোলজিস্টরা আগাম সন্তান প্রসবের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। টেক্সাসের ডা. এস. জি. মুক্কালা বলেন, “অকাল প্রসবের কারণে শিশুর ফুসফুস পুরোপুরি বিকশিত না হওয়া, কম ওজন, স্নায়বিক জটিলতা এবং খাওয়াদাওয়ার সমস্যা হতে পারে। এই ঝুঁকিগুলো এড়িয়ে চলা উচিত।”
নতুন নীতির প্রভাব
নতুন নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, অস্থায়ী ভিসা (যেমন, H-1B বা L-1) কিংবা অনথিভুক্ত অভিবাসীদের সন্তানরা আর জন্মগতভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। এই নীতির ফলে বহু ভারতীয় পরিবারের মধ্যে, যারা বছরের পর বছর গ্রিন কার্ডের অপেক্ষায় ছিলেন, ভীতি এবং অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার এক ভারতীয় দম্পতি, যারা আট বছর ধরে অনথিভুক্ত অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছেন, তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। স্বামী বলেন, “আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়েন এবং আমাদের আইনজীবী পরামর্শ দিয়েছিলেন সন্তানের নাগরিকত্বের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে। এখন আমরা পুরোপুরি অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি।”
আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি অবিলম্বে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ডেমোক্র্যাট-প্রধান ২২টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা এই নীতির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা বলেছেন, “এই নির্বাহী আদেশ অসাংবিধানিক এবং প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতার অপব্যবহার। আমরা আদালতের কাছে অনুরোধ জানাই, যেন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মার্কিন মাটিতে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের অধিকার সুরক্ষিত করা হয়।”
ভারতীয় পরিবারগুলোর মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ
নীতিটি ঘিরে অনিশ্চয়তার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বহু ভারতীয় মা গভীর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। ছয় বছর ধরে গ্রিন কার্ডের অপেক্ষায় থাকা প্রিয়া নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, আমাদের সন্তানের জন্ম আমাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করবে। এখন আমরা আতঙ্কিত এবং জানি না কী করব।”
জন্মগত নাগরিকত্ব বন্ধ করার এই উদ্যোগ শুধু আইনি লড়াইকে উস্কে দিচ্ছে না, বরং অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে ভয় এবং তাড়াহুড়ো তৈরি করেছে। ২০ ফেব্রুয়ারির কার্যকর তারিখের কাছাকাছি সময়ে, অভিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আলোচনা এবং বিতর্ক তীব্রতর হচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ জাকারিয়া ইসলাম
ঠিকানা: ৫২/৬, র্যামস উইনিটি, পশ্চিম রাজাবাজার, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৭২২-৫৬৮০০৮
© ২০২৫ | অল নিউজ বিডি ২৪ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ডিজাইন | অল নিউজ বিডি ২৪